কাজী জাহাঙ্গীর ॥ ‘প্রয়োজন হলে রেখে দিন, না হলে যার প্রয়োজন তাকে দিন’ ভিন্ন ধর্মী এক সেøাগান, ব্যতিক্রমী সব প্রয়াস। এই স্লোগান নিয়ে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় শুরু থেকে লড়াই চালাচ্ছেন একজন জনপ্রতিনিধি। তার ব্যক্তিগত ও মানবিক উদ্যোগ এখন দক্ষিনাঞ্চলের লাখো মানুষের মুখে মুখে। তিনি তার নিজ এলাকা ভাণ্ডারিয়ায় করোনা মোকাবেলায় যে সব উদ্যোগ নিয়েছেন তা এখন দৃষ্টান্ত হওয়ার পথে। জনবান্ধব এই জনপ্রতিনিধি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মিরাজুল ইসলাম। তিনি চলমান এই সংকট কালে সরকারী বরাদ্ধের জন্য বসে থাকেন নি। নিজ উদ্যোগে ব্যক্তিগত অর্থায়নে উপজেলার দলমত নির্বিশেষে জনসাধারণকে করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখতে এবং ভাইরাসের কারনে কর্মহীন, অসহায় হতদরিদ্র শ্রমজীবিসহ সর্বস্তরের মানুষের খাদ্য সংকট লাঘবে যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা জনপ্রতিনিধিদের অনুসরণ যোগ্য ও বিরল দৃষ্টান্ত।স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের শুরুতে এর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কি করতে হবে সে বিষয়ে অধিকাংশ জেলার ধারনা খুব একটা স্পষ্ট ছিলো না। তবে সারা দেশে সত্যিকার অর্থে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যেসব অঞ্চল সর্বোচ্চ সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহন করেছে তার মধ্যে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা অন্যতম। আর এর নের্তৃত্ব দিয়েছেন সর্বজনপ্রিয় জননেতা ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম।
শুধু করোনা ভাইরাস দুর্যেগেই সীমাবদ্ধ নয় মিরাজুল ইসলাম। ভান্ডারীয়াবাসীর যে কোন দুর্যোগেই তাঁর ভূমিকা প্রসংশনীয়। গত বুধবার সন্ধ্যায় দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে হামলা চালায় সুপার সাইক্লোন ঘুর্ণিঝড় আম্ফান। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয় বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চল। এই মহাবিপদকালীন দুর্যোগেও তার প্রস্তুতি ও সহযোগিতা ছিলো ব্যাপক। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিপদ সংকেত পাওয়ার পরপরই দলবল নিয়ে নেমে পরেন সাধারন মানুষের নিরাপত্তার কাজে। নিজে ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীসহ তার প্রতিষ্ঠিত মিরাজুল ইসলাম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সদস্যদের দিয়ে উপজেলাবাসীকে সাইক্লোন শেল্টারে যেতে উদ্ভুদ্ধ ও সহায়তা করেন।
ভান্ডারিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক এহসান হাওলাদার জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিপদ সংকেত পাওয়ার পরপরই ভান্ডারিয়াবাসীর হৃদয়ের স্পন্দন উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম ভাই ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীসহ তার প্রতিষ্ঠিত মিরাজুল ইসলাম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সদস্যদের নিয়ে সাধারন মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সাইক্লোন শেল্টারে যাওয়ার ব্যাপারে সবাইকে উৎসাহিত করেন ও ব্যবস্থা গ্রহন করেন। তাৎক্ষনিক ৫ শতাধীক মানুষকে ছাতা কিনে দেন এবং ১২ শতাধীক মানুষকে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করে দেন। যা ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীসহ ফাউন্ডেশনের সদস্যরা সকলের মাঝে বিতরন করেন। এহসান হাওলাদার আরও বলেন, ঝড়ের পরপরই ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়েছে। তালিকা প্রস্তুত হয়ে গেলেই তাদের মাঝে টিনসহ গৃহ নির্মানের সামগ্রী বিতরন করা হবে। তিনি আরও বলেন, করোনা ভাইস দুর্যোগ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই দলমত নির্বিশেষে ভান্ডারিয়ার সকল শ্রেণীপেশার মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেয়া হয়। যা এখনও চলমান আছে এবং আগামীতেও থাকবে ইনশাআল্লাহ।
ভান্ডারিয়া উপজেলায় প্রবেশের ৮টি পথ রয়েছে। পথগুলোতে বসানো হয় চেক পোষ্ট। দেশে সংক্রমনের প্রাথমিক পর্যায় থেকে এসব পথ ব্যবহার করে যেসব যানবাহন শহরে ঢুকেছে প্রত্যেকটি যানবাহন জীবানুনাশক স্প্রে দিয়ে জীবানুমুক্ত করার পর শহরে ঢোকার অনুমতি পাচ্ছে। শহর লক ডাউন হয়ে গেলে যারা হাঁটা পথে এবং জরুরি প্রয়োজনে শহরে প্রবেশ করছেন তাদের থার্মাল গান দিয়ে প্রাথমিক স্ক্রিনিং এর ভেতর দিয়ে যেতে হয় এবং মেশিনে টেম্পারেচার তারতম্য দেখা দিলে দ্রুতচিকিৎসকের পরামর্শে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এ জনপদে। এজন্য ৪০টি উন্নত প্রযুক্তির থার্মাল গান কেনা হয়েছে। হাসপাতাল, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, এসিল্যান্ডের কার্যালয়, ভান্ডারিয়া থানা, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মত সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের বায়োলজিক্যাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসব প্রতিষ্ঠানে থার্মাল গান সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতি রাতে ভাণ্ডারিয়া শহরের প্রধানতম ৩০ কিলোমিটার রাস্তা এবং শহরের প্রধান রাস্তাগুলো মোডিফাইড গাড়ি ব্যবহার করে জীবানুনাশক দিয়ে ধুয়ে ফেলা হচ্ছে।
এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সম্মূখে করোনা স্যাম্পল কালেকশন বুথ স্থাপন, বিভিন্ন মালামাল ক্রয় বাবদ নগদ ১০ লাখ টাকা প্রদান করেন উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম। যারা সর্দি, কাশি, জ্বরের মত গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য চালু আছে টেলিমেডিসিন সেবা। হাসপাতালে গিয়ে সংক্রমনের ঝুঁকি না বাড়িয়ে, প্রয়োজনে মেডিকেল অফিসার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ভান্ডারিয়া, ০১৩১০৫৫২০৬৬ এই নম্বরে ফোন করে সেবা নেন মানুষ। করোনা রোগীর জন্য সার্বক্ষণিক জরুরি প্রয়োজনে দুটি স্পেশাল অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেই সাথে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় দুর্যোগের প্রাথমিক পর্যায় থেকে। ৫০০টি ডিসপোজেবল পিপিই এবং বিশেষ নিরাপত্তা ইকুইপমেন্টসহ ৫০টি রিইউসঅ্যাবল পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে। মাষ্ক এবং হ্যান্ড গ্লোবস দেয়া হয়েছে ২০ হাজার করে। সচেতনতা কার্যক্রমের পাশাপাশি সাধারন জনগেনের মাঝে মাষ্ক বিতরণ করা হয়েছে ৫০ হাজার। হ্যান্ড গ্লোবস বিতরণের পরিমান এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার, ইতোমধ্যে ৭২ হাজারেরও অধিক পরিবারের মাঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় (চাল, আলু, মশুর ডাল, তৈল, সাবান, চিড়া, চিনি ও ছোলা) খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে এবং যা এখনও চলমান আছে। ঝুঁকি এড়াতে লকডাউন হওয়া বাড়িগুলোর সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। সংক্রমন এড়াতে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ক্রয়ে কোন মানুষকে যেন ভিড়ের মধ্যে পড়তে না হয়, এজন্য ৭টি ভ্রাম্যমান ট্রাক প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও নিত্যপ্রযোজনী বাজার নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌছে দিতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৩০০শত নেতাকর্মী।
জানাগেছে, ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মোট ৬৩টি ওয়ার্ডে ৪১,৯৭১ (একচল্লিশ হাজার নয়শত একাত্তর) উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিন্ম মধ্যবিত্ত ও হত দরিদ্র পরিবার রয়েছে। পাশাপাশি ১২,০০০ (বার হাজার) আবাসন, আশ্রায়ন গুচ্ছগ্রাম ভাসমান এবং ভাড়াটিয়া পরিবার রয়েছে। সকল শ্রেনী পেশার প্রতিটি পরিবারের বাড়িতে মিরাজুল ইসলাম নিজ অর্থায়নে করোনা ভাইরাস সংকটের শুরু থেকে অদ্যাবধি খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন মিরাজুল ইসলাম। করোনা মোকাবেলায় মিরাজুল ইসলামের এই মহতী উদ্যোগ জনবান্ধব কাজ নিয়ে আলোচনা শুধু ভাণ্ডারিয়া নয় গোটা দক্ষিনাঞ্চল জুড়ে আলোচিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাস আমাদের দেশ তো বটেই বিশ্বজুড়ে নতুন এক দুর্যোগ। এটি মোকাবেলায় যথাযথ কৌশল আমাদের অজানা ছিলো। মানবতার মা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা পেয়ে আমরা ভাণ্ডারিয়ার মানুষকে নিরাপদে রাখতে নানা কর্মসূচি হাতে নেই। যা এখনও চলমান আছে। এ বিষয়ে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল আলম বলেন, করোনা সংকট মোকাবেলায় প্রশাসনের পাশাপাশি একজন উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটি এখন বিরল দৃষ্টান্ত। তিনি একজন জনবান্ধব জনপ্রতিনিধি। করোনা মোকাবেলায় তার মহতী উদ্যোগ গুলোর সুফল ভাণ্ডারিয়াবাসি পাচ্ছেন। দুর্যোগে এরকম জনপ্রতিনিধি ও বিত্তবানরা এগিয়ে এলে দুর্যোগ মোকাবেলা ফলপ্রসূ হবে।
Leave a Reply